দশম শ্রেণির, প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ক্ষেত্রে রবীন্দ্র চিন্তা ব্যাখা করো।

দশম শ্রেণির, বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ (উনিশ শতকের মধ্যভাগ-বিশ শতকের প্রথমভাগ): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নাবলী। প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ক্ষেত্রে রবীন্দ্র চিন্তা ব্যাখা করো।

Marks-8


ভূমিকা:-

রবীনাথ ঠাকুর শিক্ষাকে মানুষ ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় বলে মনে করতেন না। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তোলা দরকার।

১. অরণ্য ধ্বংসের বিপদ:-

রবীন্দ্রনাথ বলেন যে সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন করে বেঁচে থাকা। কিন্তু আজ মানুষের নির্মমভাবে বন ধ্বংস করে মরুভূমিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ‘অরণ্য দেবতা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘অনেক মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে নিজেরাই ক্ষতি ডেকে এনেছে। বায়ুকে নির্মল করার ভার যে গাছের ওপর, যার পত্র ঝরে গিয়ে ভূমিতে উর্বরতা দেয়,তাকেই সে নির্মূল করেছে।

২. প্রকৃতির মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা:-

রবীন্দ্রনাথ বলেন যে ‘‘এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে...।’’ তিনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবকে জোরদার করে তোলেন।

৩. গ্রামের উন্নয়নের ভাবনা:-

পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব (১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ) পেয়ে রবীন্দ্রনাথ গ্রামে এসে গ্রাম বাংলার আসল রূপে চিনতে পারেন। তাই তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের পথ ছেড়ে গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে পল্লী গ্রামের মঙ্গলের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন গ্রামে ভারতের প্রাণ। গ্রামের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। জমিদারির প্রজাদের বিবাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভারও আয়োজন করেন তিনি। শিলাইদহে ‘মহর্ষি দাতব্য চিকিৎসালয়’ এবং পতিসরে হাসপাতাল স্থাপন ছাড়াও তিনি গ্রামের তাঁতের কাজ, মৃৎশিল্প প্রভৃতি কুটির শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেন।

৪. কৃষির উন্নয়ন:-

রবীন্দ্রনাথ পল্লী গ্রামের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষি খামার গড়ে তোলেন।

৫. কৃষিবিদ্যা শিক্ষা:-

সে যুগের ধনী বাঙালি পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের সন্তানদের আই সি এস বা ব্যারিস্টার বানানো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ও জামাতা নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীকে কৃষিবিদ্যা শিখতে বিদেশে পাঠান। 

৬. হিতৈষী তহবিল:-

রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে প্রজাদের বকেয়া খাজনার ওপর সামান্য হিতৈষীশুল্ক ধার্য করে এবং জমিদারি থেকে তার সমপরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়ে হিতৈষী তহবিল গড়ে তোলা হয়। এই তহবিলের অর্থ গ্রামের রাস্তাঘাট নির্মাণ, মন্দির-মসজিদের সংস্কার, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, চাষীদের বিপদকালে সাহায্যদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যয় করা হত।

৭. সম্প্রীতি:-

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করা। তিনি জমিদারি দেখাশোনার করতে এসে তাঁর কর্মক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান-ব্রাহ্মণ-চন্ডালের ভেদাভেদ দূর করে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন।

৮. অন্যান্য উদ্যোগ:-

রবীন্দ্রনাথ আধুনিক পঞ্চায়েতের ধাঁচে গ্রামের পরিচালন কাঠামো গরেছিলেন। তিনি গ্রামে সমবায়সমিতি প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেন  এবং স্বল্প সুদে চাষিদের ঋণ দানের জন্য পতিসর কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’(১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে) প্রতিষ্ঠা করেন।

উপসংহার:-

‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘‘আমার শিশুকালে বিশ্ব প্রকৃতির সাথে আমার খুব একটি সহজ ও নিবিড় যোগ ছিল।’’প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন অস্তিত্বের এই অবস্থান তার প্যাকিং তাই সর্বদা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।





Post a Comment

0 Comments