নবম শ্রেণীর ইলিয়াস গল্পের বিষয়সংক্ষেপ। A summary of Ilyas story in class 9
ইলিয়াস
লিও তলস্তয়
উৎস:-
‘লিও তলস্তয়’ রচিত ‘ইলিয়াস’ গল্পটি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত গল্পটি তলস্তয়ের ‘Twenty Three Tales’নামক গল্প সংকলনে প্রকাশিত হয়। পাঠ্য গল্পটি সেই গল্পটির অনুবাদ। অনুবাদ করেছেন মণীন্দ্র দত্ত।
বিষয়সংক্ষেপ:-
পশ্চিম রাশিয়ার উফা প্রদেশে বাসকির গোষ্ঠীভুক্ত ইলিয়াস নামে এক ব্যক্তি বাস করত। ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পর যখন তার বাবা মারা যান, তিনি খুব বেশি সম্পত্তি রেখে যেতে পারেননি। কিন্তু ইলিয়াসের বুদ্ধিতে এবং স্বামী-স্ত্রীর কঠোর পরিশ্রমে ক্রমশ তাদের অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। পঁয়ত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দুশো ঘোড়া, দেড়শো গরু-মোষ, বারোশো ভেড়ার মালিক হয়ে ওঠে ইলিয়াস। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অতিথিদের আগমনে ইলিয়াসের প্রাসাদ গমগম করত। ইলিয়াসের প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবেশীরা তাকে হিংসা করতে শুরু করে।
ইলিয়াসের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিল তাদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ইলিয়াস বড়লোক হওয়ার পর ধনসম্পত্তির অহংকারে তার ছেলেরা বিলাসী ও অলস হয়ে ওঠে। এইসময় তার বড়ো ছেলে একটি মারামারির ঘটনায় মারা যায়। ছোট ছেলের বউ খুব ঝগড়াটে হওয়ায় ইলিয়াস তাদের সম্পত্তির ভাগ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
পরবর্তীকালে মড়ক, দুর্ভিক্ষ, এবং কিরবিজদের অত্যাচারে ক্রমশ ইলিয়াসের সম্পত্তি কমতে থাকে। সত্তর বছর বয়সে ইলিয়াস বাধ্য হয়েই তার শেষ সম্বল পশমের কোট, কম্বল, ঘোড়ার জিন,তাবু এবং গৃহপালিত পশুগুলি বিক্রি করে সর্বহারা হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে ইলিয়াসের বিতাড়িত পুত্রও অনেক দূর দেশে চলে যায়। আবার তাদের মেয়েটি মারা যাওয়ায়ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে সাহায্যের কেউ থাকে না। তাই শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী শাম-শেমাগি অচেনা এক ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং তাদের বাড়িতে মজুর হিসেবে কাজকর্ম করে কোনরকমে দিন কাটায়।
মহম্মদ শা নামে ইলিয়াসের এক প্রতিবেশী ছিল। তার অবস্থা খুব সচ্ছল না হলেও সে ভালো মনের মানুষ ছিল। ইলিয়াসের আতিথ্যের কথা মনে করে সে বৃদ্ধ ইলিয়াস দম্পত্তিকে নিজের বাড়িতে কাজের বিনিময়ে আশ্রয় দেয়। মহম্মদ শা-র এই উপকারের বিনিময়ে বৃদ্ধ ইলিয়াস ও তার স্ত্রী তাদের সাধ্যমতো পরিশ্রম করত।
একদিন মহম্মদ শা-র বাড়িতে এক ধর্মপ্রাণ মোল্লাসাহেব-সহ কিছু অতিথি আসেন। মহম্মদ শা তাদের আপ্যায়নের ফাঁকেই বৃদ্ধ ইলিয়াসকে দেখিয়ে অতিথিদের জানায় যে ইলিয়াস একসময় তাদের এলাকার ধনী ও অতিথিপরায়ন ব্যক্তি ছিল। সে সময় তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তে বর্তমানে ইলিয়াস ও তার স্ত্রীর সর্বহারা হয়ে তার বাড়িতেই মজুরের কাজ করে একথা শুনে খুব অবাক হয়ে জানান যে ভাগ্যের চাকা কাউকে উপরে উঠে আবার কাউকে নিচে নামায়। বৃদ্ধ ইলিয়াসের সঙ্গে অতিথিরা কথা বলে তার অতীত জীবনের সুখ সমৃদ্ধি এবং বর্তমান দুরবস্থায় তার মানসিক অবস্থার কথা জানতে চান। ইলিয়াস জানায় যে এই বিষয়ে তার স্ত্রী শাম-শেমাগি সম্পূর্ণ সত্যটা বলতে পারবে।
প্রশ্নের উত্তরে শাম-শেমাগি বলে তারা পঞ্চাশ বছরের ধনী জীবন কাটালেও সেই সময়ে সুখের সন্ধান পায়নি। কিন্তু বর্তমানে সর্বহারা ভাড়াটে মজুর হয়েও তারা যে সুখ পেয়েছে তারপর তাদের জীবন আর কিছুই চাই না। বৃদ্ধা আরও বলে যে যখন তারা ধনী ছিল তখন তাদের মনে এক মুহূর্তের জন্য শান্তি ছিল না, মনের কথা বলার বা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা সময় ছিল না। সর্বদা পাপবোধ এবং দুশ্চিন্তায় তাদের দিন কাটত। কিন্তু এখন তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অন্তরের কথা আলোচনা হয়, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময়ও এখন তাদের রয়েছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর মনিবের জীবন কাটালেও এখনই তারা প্রকৃত সুখের হদিস পেয়েছে।
একথা শুনে অতিথিরা হেসে উঠলে ইলিয়াস বলে এটাই জীবনের সারসত্য। সম্পত্তির মোহে অন্ধ ছিল বলে তারা সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিল। কিন্তু ঈশ্বর তাদের সম্পত্তিহারা করলেও জীবনের প্রকৃত সত্য ও সুখের হদিস দিয়েছেন।
একথা শুনে মোল্লা সাহেব বলেন যে ইলিয়াসের সকল কথায় সত্য এবং জ্ঞানের কথা। এগুলি পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে। মোল্লা সাহেবের কথা শুনে অতিথিরা চিন্তামগ্ন হলেন।
0 Comments