ভারতের বিশ্বায়নের ফলাফল আলোচনা করো।

ভারতের বিশ্বায়নের ফলাফল আলোচনা করো । দ্বাদশ শ্রেণীর সমাজবিজ্ঞানের ভারতীয় সমাজ: কাঠামো ও প্রক্রিয়া অধ্যায়ের (বিশদ উত্তরধর্মী / বিশ্লেষণধর্মী) প্রশ্নের উত্তর । Important question of Sociology in class 12 । WBCHSE । Marks-8


ভূমিকা:-

বিশ্বায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থাসমূহ বিশ্বজুড়ে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশ্বায়ন পারস্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকা শক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি, সকল কিছুর উপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বায়ন প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের বৈশ্বিকভিত্তিতে অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলের সাথে একীভূত করার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক, কারিগরি, সামাজিক ও কৃষ্টি এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রাবলী। জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথে একীভূতকরণের প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করার জন্য এই শব্দটি অধিকতর ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

বিশ্বায়নের প্রভাব প্রতিক্রিয়া বেশ ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। সমাজের বিভিন্ন অংশের উপর এর প্রভাব রয়েছে। আর এই প্রভাবকে কেন্দ্র করে ব্যাপক মতপার্থক্যও বর্তমান। কেউ ভাবছেন, উন্নতর বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে গেলে বিশ্বায়ন বিশেষভাবে আবশ্যক। তারা এর সুফলের দিক গুলি বেশি করে তুলতে আগ্রহী। আবার কোন কোন অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, এটি মূলত ধনী আর শোষক দেশগুলোর দরিদ্র দেশের বাজার দখলের কৌশল। সমাজের ধনিক বণিকরা বুঝেছেন বিশ্বায়ন হলো পণ্য আর পুঁজির অবাধ প্রবাহ। এসবই হয়তো সত্য। যাই হোক এ নিয়ে মত-দ্বিমত-বহুমত-এর অবতারণা হতেই থাকে এবং সেখানে যুক্তি-তর্কেরও অবকাশ রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, ভারতে বিশ্বায়নের ফলাফল বিষয়ে আমরা কয়েকটি সুফল ও অন্যদিকে কিছু কুফল দিকের কথা বলতে পারি।

সুফল:-

১. বিশ্বায়নের সুফলের দিক হিসেবে, বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারকে ইঙ্গিত করা হয়।
২. ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতীয় জিনিসপত্রের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
৪. বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলি ভারতে তাদের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, ফলে ওই সংস্থায় কর্মরত নিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫. কিছু ভারতীয় কোম্পানি বিদেশি কোম্পানির সাথে হাত মিলিয়ে লাভের মুখ দেখছে।
৬. বিশ্বায়ন ভারতে বৈচিত্র মুখী চাকুরী ক্ষেত্রে প্রসারিত করেছে বিশেষ করে মার্কেটিং ও তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে।
৭. এছাড়াও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসার, বৃহদায়তন কর্মকাণ্ডের প্রসার, জ্ঞান ও দক্ষতা সমন্বয়, যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি প্রভৃতি বিশ্বায়নের ইতিবাচক দিক।

কুফল:-

১. মুক্তবাণিজ্য এদেশে অনেকদিন শিল্পকে গুটিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। বৃহৎ পুঁজিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর সাথে দেশীয় কোম্পানিগুলি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রয়াসে হার মেনেছে।যারফলস্বরূপ, দেশীয় কোম্পানিগুলি গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
২. ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, তবে তার অনেকখানিই হিসাবে ঋণ হিসাবে।
৩. বিশ্বায়ন ভারতের অদক্ষ শ্রমিকের কাছে অভিশাপস্বরূপ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির আছে তারা হার মেনে হয়ে পড়েছেন বেকার। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেলেও তা অস্থায়ী প্রকৃতির ও কম মজুরির।
৪. বিশ্বায়নের দ্বারা সংস্কৃতি আজ চরম ভাবে বিপর্যস্ত। ধনী দেশসমূহের অপসংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
৫. উন্নত বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা উপকৃত হওয়ার আশায় একদিকে যেমন প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হতে হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের একান্ত নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস হচ্ছে।
৬. এক স্থানের সাথে অন্য স্থানের জনগোষ্ঠীর আর্থিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূল্যায়ন:-

বিশ্বায়নের ব্যাপারে এ যাবৎ অদ্ভুত সকল বিতর্কের মধ্যে যা জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ তা হলো এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা। কেননা বিশ্বায়ন উত্তরের ধনী দেশ খ্যাত পুঁজিবাদী বিশ্বের স্লোগান। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ভিন্নমাত্রায় অনেক আগেই সূচিত হলে বর্তমান সর্বগ্রাসী ও সর্বধংসীরূপ এই বিতর্কের জন্মদাতা। তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভর দিয়ে গোটা বিশ্ব অনেক এগিয়েছে সত্য কিন্তু এই অগ্রযাত্রার সুফল কতটা পেয়েছে স্বল্পোন্নত দক্ষিণের বিশ্ব এটি জটিল প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। অথচ সবার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা লক্ষ্যেই শুরু হয়েছিল বিশ্বায়নের অভিযাত্রা। বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে অনুমান করা হয় যে, তা সব দেশের জন্য সমান হবে না। বিশ্বায়নের ফলে অনেক দেশ হয়ে পড়বে দরিদ্রতর, অনেক মানুষ হবে দরিদ্র। পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সমৃদ্ধি অর্জন কঠিন এবং কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এছাড়াও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবার ভেঙ্গে পড়ছে, বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ, অপরাধ আন্তর্জাতিক হয়ে পড়েছে। এবং মানুষে মানুষে একতা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

উপসংহার:-

পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বকে একই আয়নায় দেখার জন্য বিশ্বায়নের সৃষ্টি। বিশ্বায়নের কিছু নেতিবাচক প্রভাব থাকলেও এটি তার আপন গতিতে চলমান। এর নেতিবাচক দিকগুলো প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে ইতিবাচক দিকগুলোর অর্জন সুফল অর্জন করাই আমাদের মত দেশগুলোর করণীয় হওয়া উচিত।











Post a Comment

0 Comments